ঢাকা, বুধবার, ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হত্যা মামলায় এসআইয়ের যোগসাজসে খুনিরা বাইরে, নির্দোষ নারী জেলে

রাজধানীর কদমতলীর রায়েরবাগ চৌরাস্থায় ১১ বছরের কিশোর রাব্বীকে (১১) শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় মোটা অংকের টাকায় খুনিদের আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে।কদমতলী থানার এসআই শহিদুল মামুন যোগসাজসে প্রকৃত হত্যাকারীদের ছেড়ে কিশোর রাব্বীর নিরাপরাধ আপন মামা, মামি ও মামাতো ভাইকে ফাঁসিয়ে দিয়ে জেল খাটিয়েছে। জেল থেকে আড়াই মাস পর মামা সিরাজ ও মামাতো ভাই সাগর জামিন পেলেও নিহত রাব্বীর মামি সাজেদা এখনও জেল খাটছেন অথচ প্রকৃত হত্যাকারী সুদ ব্যবসায়ী কামাল ও তার স্ত্রী সালমা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন(ক্র্যাব) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত কিশোর রাব্বির মা জোবেদা খাতুন হত্যাকান্ডের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে প্রকৃত খুনিদের ফাঁসি ও নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাব্বির পিতা লিটন মিয়া, মামা সিরাজ ও মামাতো ভাই সাগর, ফারুক, আকবর হোসেন ও কবির।
নিহত রাব্বির মা জোবেদা খাতুন বলেন, ‘রাব্বি সাত বছরযাবত মামা সিরাজের চায়ের দোকানে কাজ করত। চায়ের দোকান ও মুদি দোকানে সবাই মিলে কাজ করেন। স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ী কামাল ও সিরাজের পরিবার একই বাড়িতে থাকতো। কামাল মাঝে-মধ্যেই রাব্বির কাছ থেকে বাকিতে সিগারেট ও কোল্ডড্রিংস নিয়ে টাকা দিত না। কামাল রাব্বিকে মামার দোকানের টাকা-পয়সা চুরি করে তার কাছে জমা রাখতে বলতো ও মামার দোকান ছেড়ে তার মুদি দোকানে কাজ করতে বলতো। রাব্বি এ সব কথা তার মামাকে বলে দিতো। এ সব বিষয়ে সিরাজ কামালকে বকা দিলে কামাল রাব্বিকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে দোকান থেকে রাব্বি বাসায় ভাত খেতে যায়। এ সময় মামা, মামি ও মামাতো ভাইসহ কেউ বাসায় ছিলো না। তারা সবাই দোকানে ছিলো। ওই সুযোগে কামাল ও তার স্ত্রী সালমা রাব্বিকে একা পেয়ে ঘরে ঢুকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে রাব্বিকে হত্যা করে ও মৃতদেহ বাথরুমে ঝুলিয়ে রেখে চলে যায়। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে রাব্বির নিথর দেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জোবেদা বেগম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘খবর পেয়ে গ্রামের বাড়ি কুমিলøা থেকে রাতে তিনি আর রাব্বির পিতা লিটন মিয়া ঢাকায় এসে রাতে মামলা করতে কদমতলী থানায় যান। থানার ডিউটি অফিসার এসআই শহীদুলøাহ মামুনকে বিষয়টি জানালে তিনি তাৎক্ষণিক কামালের বাসায় পুলিশের টিম নিয়ে হাজির হলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কামাল পালিয়ে যায়। ওই বাসা থেকে খুনি কামালের স্ত্রী সালমা বেগমকে আটক করে, ওই সময় সিরাজের স্ত্রী সাজেদা বেগমকে কথা বলার জন্য থানায় নিয়ে আসেন। তারা অশিÿিত জানার পর এসআই শহীদুলøাহ মামুন একটি মামলা লিখে তাতে রাব্বির পিতা মো. লিটন মিয়ার স্বাক্ষর নেন। এরই মধ্যে ফয়সাল নামের এক পুলিশ সোর্সের মাধ্যমে এসআইয়ের সাথে যোগাযোগ করেন খুনি কামাল। ওই রাতেই ফয়সালকে তিন লাখ ৪১ হাজার টাকা ও তার মাধ্যমেই এসআই শহীদুল মামুনকে ছয় লাখ টাকা দেয় কামাল। বিনিময়ে ওই রাতেই কামালের স্ত্রী সালমাকে ছেড়ে দেয় ওই এসআই, কিন্তু ভাবি সাজেদাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
রাব্বীর মা আরো বলেন, ‘এজাহার কপিতে এসআই শহীদুল মামুন কী লিখেছে তা আমরা জানতে পারিনি। পরে পুলিশ সোর্স ফয়সাল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভাই সিরাজ ও ভাতিজা সাগরকে ডেকে নিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে জানতে পারি, এজাহার কপিতে ওই এসআই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সিরাজ ও তার স্ত্রীর নাম দিয়েছে। শুধু তাই নয় সিরাজ ও ভাতিজা সাগরকে থানায় নিয়ে ব্যাপক নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের ব্যাপক মারধর করে। রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যায় এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লেখা কাগজে ভাতিজা সাগরের স্বাক্ষর নেয়। এর মধ্যে আড়াই মাস জেল খেটে ভাই সিরাজ ও ভাতিজা সাগর জামিনে বের হলেও ভাবি সাজেদার এখনও জামিন হয়নি।’
অপরদিকে, মূল হত্যাকারী কামাল মোবাইল ফোনে তাদের জানায় রাব্বিকে রাগের মাথায় শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। বিনিময়ে তাদের ১০ লাখ টাকা দেয়ারও প্রস্তাব দিলে তা এসআই শহীদুল মামুনকে মোবাইল রেকর্ডিং শোনাই। রেকর্ডিং শোনার পর এসআই জানান, মামালা রুজু হয়ে গেছে, এখন এসব দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এরপর অসংখ্যবার কামাল রাব্বি হত্যা মামলায় তাদের না জড়াতে বলে মোটা অংকের টাকার অফার করে ও কামালের মুদি দোকানটি বিক্রি করে স্ব-পরিবারে পালিয়ে যায়। তারা এখন পর্যন্ত পলাতক থেকে ফোনে হুমকি দেয়া অব্যাহত রেখেছে। রাব্বি হত্যাকান্ডে জড়িত কামাল ও তার স্ত্রী সালমা এসআই শহীদুল মামুনের যোগসাজসে গ্রেফতার না করে নিহতের মামা-মামী ও মামাতো ভাইকে ফাঁসিয়ে জেল খাটিয়েছে। এ কারণে কামাল ও তার স্ত্রী সালমার ফাঁসির দাবি জানিয়ে নির্দোষ ভাই-ভাবি ও ভাতিজাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে এবং কদমতলী থানার তৎকালীন এসআই শহীদুলøাহ মামুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এদিকে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ সোর্স ফয়সাল বলেন, ‘আমি তাদের উপকার করতে গিয়েছিলাম।

এখন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকেই ফাঁসানো হচ্ছে। আর টাকা লেনদেনের সময় আমি সেখানে ছিলাম না।’
অভিযোগের বিষয়ে মামলার এসআই শহীদুল মামুনকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।