ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে পারবেন ট্রাম্প?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুবিধা আর না রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কেউ জন্মগ্রহণ করলেই তিনি স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্ব পেয়ে যান। সোমবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেখানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টিতে ফোকাস করা হয়েছে। যদিও এর বিস্তারিত এখনও পরিষ্কার জানা যায়নি।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সব ব্যক্তিই মার্কিন নাগরিক। যদিও ট্রাম্প এই সুযোগ বন্ধ করতে সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু তার এই উদ্যোগকে উল্লেখযোগ্য আইনি বাধা অতিক্রম করতে হবে। দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এবং অন্য গ্রুপগুলো তাৎক্ষণিকভাবে এই নির্বাহী আদেশের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

• জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়টি কী?

অভিবাসন কট্টরপন্থীরা অনেক সময় বলেন, এই নীতিই অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং এটিই গর্ভবতী নারীদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করে।

একে অনেক সময় ‘বার্থ ট্যুরিজম’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর এভাবে জন্ম নেওয়া শিশুকে ‘অ্যাংকর বেবি’ বলা হয়।

• কীভাবে শুরু হয়েছিল এই নাগরিকত্বের?

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী গৃহীত হয়েছিল ১৮৬৮ সালে, গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। এর আগে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দাস প্রথার বিলুপ্তি হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। চতুর্দশ সংশোধনীতে আমেরিকায় জন্ম নেওয়া, যারা আগে দাস ছিল তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টির সমাধান করা হয়।

এর আগে, ১৮৫৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারবে না; যা ১৪তম সংশোধনীতে বাতিল হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পরে ‘ওয়াং কিম আর্ক বনাম যুক্তরাষ্ট্র’ মামলায় ১৮৯৮ সালে অভিবাসীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতির প্রয়োগ নিশ্চিত করে। চব্বিশ বছর বয়সী ওয়াং চীনা অভিবাসীর সন্তান ছিলেন। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই জন্মেছিলেন। পরে চীন সফরে গিয়ে ফিরে আসার সময় তার পুনঃপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়।

ওয়াং সফলভাবে এটি তুলে ধরেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মেছিলেন বলে তার বাবা মায়ের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের আবেদনে কোনও প্রভাব ফেলবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিগ্রেশন হিস্টরি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক এরিকা লি বলেছেন, ওয়াং কিম আর্ক বনাম যুক্তরাষ্ট্র মামলা নিশ্চিত করে যে, বাবা-মায়ের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস বা বর্ণ যাই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সব ব্যক্তিই নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য সব সুবিধা পাওয়ার দাবিদার।

তার মতে, আদালত এরপর আর বিষয়টি পুনরায় কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি।

• নাগরিকত্বের নীতি উল্টে দিতে পারেন ট্রাম্প?

বেশিরভাগ আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সুবিধার সমাপ্তি টানতে পারেন না। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল স্কুলের অধ্যাপক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ সাইকৃষ্ণ প্রকাশ বলেন, ট্রাম্প এমন কিছু করেছেন যা বহু মানুষকে হতাশ করতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে আসলে সিদ্ধান্ত হবে আদালতে। এটি এমন কোনও বিষয় নয় যে তিনি নিজের ইচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

প্রকাশ বলেন, প্রেসিডেন্ট ফেডারেল এজেন্সিকে নাগরিকত্বের বিষয়টি আরও সতর্কভাবে ব্যাখ্যা করতে আদেশ দিতে পারেন। কিন্তু নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হলে যে কেউই আদালতে সেটি চ্যালেঞ্জ করবেন।

‘‘এটি লম্বা আইনি লড়াইয়ের সূচনা করতে পারে; যা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারে।’’

• ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন কত মানুষ?

গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালে অবৈধ অভিবাসী বাবা-মায়ের মোট সন্তান জন্ম নিয়েছিল আড়াই লাখ। যা ২০০৭ সালের চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এমন ১২ লাখ মার্কিন নাগরিকের জন্ম হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের ঘরে।

এসব সন্তানদের সন্তানও হবে মার্কিন নাগরিক। ২০৫০ সাল নাগাদ অবৈধ অভিবাসীদের সন্তান সংখ্যা ৪৭ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে দ্য মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউট নামের একটি সংস্থা।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের বাবা-মায়ের সাথে প্রত্যাবাসন বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো উচিত, এমনকি তারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও।

গত ডিসেম্বরে তিনি বলেছিলেন, আমি কোনও পরিবার ভাঙতে চাই না। সুতরাং পরিবার না ভেঙে বা তাদের একসাথে রাখতে হলে তাদের সবাইকে একসাথে ফেরত পাঠাতে হবে।

• কোন কোন দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আছে?

বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশে এই সুযোগ আছে। এর মধ্যে মেক্সিকো ও কানাডার মতো দেশও আছে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় বাবা মায়ের একজন নাগরিক বা স্থায়ী অধিবাসী হলে তাদের সন্তানকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।