
দেশ থেকে বিদেশে লোক পাঠাতে বিভিন্ন শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার ‘আমরা সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট’। তারা অবলিম্বে মালয়েশিয়াসহ সব শ্রমবাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করে সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এই দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ১০ জনকে নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ১২ লাখ ২৫ হাজার শ্রমিককে চাকরি বঞ্চিত করা, হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশকে বঞ্চিত করা এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকির কারণে আমাদের আজকের এই কর্মসূচি। তারা বলেন, সিন্ডিকেট একটি কুপ্রথা, এটি শ্রমিক শোষণের হাতিয়ার। এই পদ্ধতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হলে দেশের জনগণ শোষিত হয়, জনগণের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়, দুর্নীতি বেড়ে যায়, দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। জনশক্তি রফতানি বাংলাদেশের অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধির প্রাণ। জনশক্তি রফতানি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আজ দেশের যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার সিংহভাগের দাবিদার জনশক্তি রফতানি।
তারা আরও বলেন, মালয়েশিয়া শ্রম বাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। এ দেশে লাখো শ্রমিক কর্মরত। আরও লক্ষাধিক শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। ২০১৬ সালে সম্পাদিত জি টু জি প্লাস চুক্তির পর ১২০০ বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে বঞ্চিত করে শুধু ১০টি এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেটকে শ্রমিক রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শ্রমিক রফতানির ফলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যায়, শ্রমিক রফতানি কমে যায়, ফরেন রেমিট্যান্স কমে যায়, দুর্নীতি ও বৈষম্য বেড়ে যায়।
তারা জানান, ২০১৬ সালে দুই দেশের সরকার ঘোষণা দেয়, প্রতি বছর তিন লাখ করে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক মালয়েশিয়া যাবে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ২০১৭/২০১৮ সালের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১৫ লাখ শ্রমিকের স্থলে শুধু দুই লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ জন শ্রমিক রফতানি হয়েছে। অভিবাসন ব্যয় ৩৭ হাজার টাকার জায়গায় তারা নিয়েছে চার লাখ টাকা। প্রায় সোয়া ১২ লাখ শ্রমিক হারিয়েছে নিশ্চিত চাকরির সুযোগ। আর রাষ্ট্র হারিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ।
মানবন্ধনে সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্টের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ফারুক বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে দেশের, রিক্রুটিং এজেন্সি সমূহের এবং বিদেশগামী শ্রমিকের বিশাল ক্ষতি হয়েছে। আমরা শুনতে পাচ্ছি, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় ২৫-৩০টি রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালু হতে যাচ্ছে। আমরা সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রফতানিতে সব ধরনের সিন্ডিকেট বিরোধী। আমরা চাই শ্রম বাজার সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত রাখা হোক।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মাইক্রো এক্সপার্ট হাউজ এর স্বত্নাধিকারী মোস্তফা মাহমুদ, লিজা ওভারসিজ লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজ মিয়া, মো. ওমর আলী, গোলাম ফারুক, কাজী এম এ কাশেম, ডাক্তার জে এইচ গাজী, রেদোয়ান খান বোরহান, গোলাম মোস্তফা বাবুলসহ আরও অনেকে।