ঢাকা, রবিবার, ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৬ বছর রাষ্ট্র চালানোর পরও একটু জমি ছিল না জিয়ার: হাফিজ উদ্দিন

জিয়াউর রহমানের মতো সৎ ব্যক্তি বাংলাদেশের ইতিহাসে সৃষ্টি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম)।

তিনি বলেন, ছয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করার পর দেখা গেলো তার একটু জমি নেই। ব্যাংকে কোনো টাকা পয়সা নেই। তিনি একজন দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নামে একটি রাজনৈতিক দর্শন উপহার দিয়েছেন জিয়া। তিনি একমাত্র রাষ্ট্রপতি যার কাছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন জনপদে সাধারণ মানুষ যেতে পেরেছেন। যিনি সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, করমর্দন করেছেন। এটি উপমহাদেশের রাজনীতিতে আগে কখনো দেখা যায়নি।

 

 

শুক্রবার (১১ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন রচিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে হাফিজ উদ্দিন এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। পাকিস্তান মিলিটারি প্রশিক্ষণ একাডেমিতে তিনি আমার প্রশিক্ষক ছিলেন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তিনি আমার সিনিয়র কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমার ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে সিলেটের কানাইঘাট জয় করার পর আমরা ধীরে ধীরে সিলেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। সেই সময় কানাইঘাট টু সিলেট একটি লংমার্চ করেছিলাম।

‘আপনারা মাও সেতুংয়ের লংমার্চের কথা শুনেছেন। দীর্ঘ সময় সেখানে লেগেছিল। বাট এই এক সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত লগ্নে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সিলেট অভিমুখে যে লংমার্চ করেছে, সেটি আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এ সময় সিলেট শহর দখল করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্র এড়িয়ে আমরা খাবার-দাবার, অস্ত্রশস্ত্র পিঠে নিয়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১২০০ সৈনিকের কাফেলা চা বাগান ও হাওরের মধ্য দিয়ে সিলেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। এই লংমার্চের সময় আমরা সারারাত হাঁটতাম আর দিনের বেলা জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতাম।’

 

 

বিএনপির এই নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানের একটি স্কেচ ম্যাপ ছিল ৮ ফিট বাই ৮ ফিট। সেটার ওপর একটি পলিথিন কাভার ছিল। ভোরে যখন সূর্য উঠবে তখন এই ম্যাপটি বিছিয়ে জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ ও আমি ঘুমাতাম। চোখ খুলে যখন আমার পাশে নিদ্রারত ব্রিগেড কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে দেখতাম, তখন কখনো কল্পনাও করিনি আমার পাশের এই ব্যক্তি মাত্র চার বছরের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হবেন। আল্লাহ সেটা ঠিক করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ তাকে সেই অবস্থানে নিয়েছেন।

জিয়াউর রহমানের এই সহকর্মী বলেন, জিয়াউর রহমান নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি কখনো কোনো পদের জন্য লালায়িত ছিলেন না। আমি দেড় বছর তার একান্ত সচিব ছিলাম। তার সর্বোচ্চ স্বপ্ন ছিল তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হবেন। তার কখনো রাজনৈতিক অভিলাষ ছিল না। কিন্তু এদেশের প্রয়োজনে জনগণই তাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছে।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ বড় না ছোট, তার পারমাণবিক অস্ত্র আছে কি না, সে চিন্তাভাবনা জিয়াউর রহমানের মাথায় ছিল না। তিনি ভেবেছেন এই ব্যর্থ জনপদে তিনিই নেতা, তাকে জনগণ রাষ্ট্রপতি বানিয়েছে দেশের স্বার্থরক্ষার জন্য। এজন্যই ভারত যখন পদ্মা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেছে তিনি কোনো দেন-দরবার না করে সরাসরি জাতিসংঘে গিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়েছে ভারত। ১৯৭৭ সালে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের যে চুক্তিটি হয়েছে সেটি হলো আজ পর্যন্ত সম্পাদিত কয়েকটি চুক্তির মধ্যে সর্বোত্তম চুক্তি। যেখানে বাংলাদেশের প্রাপ্য পানি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের স্বার্থ তিনি কোনোদিন বিসর্জন দেননি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, জিয়াউর রহমান জীবিত থাকাবস্থায় কোনোদিন কাউকে ছোট করে কথা বলেননি। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু বলে সম্বোধন করে কথা বলেছেন। তার প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন এবং তার পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও তার রেহাই নেই। কেন তিনি সেই ঘোষণা দিলেন! যেই ঘোষণাটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী দিতে পারেনি, সেটি দিয়ে তিনি শাসকগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হয়েছেন।

হাফিজ উদ্দিন বলেন, এ রকম সুসজ্জিত মঞ্চে বক্তব্য দেওয়া খুবই সহজ। যখন কামান ও মেশিনগানের গোলা আপনার দিকে ধেয়ে আসবে সেটির সামনে বুক পেতে দিয়ে দেশের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিতে কয়জন রাজনৈতিক নেতা আছেন? কিন্তু তিনি নিজের কথা ভাবেননি। তিনি ভেবেছেন এই মুহূর্তে দেশের মানুষকে রক্ষা করা তার পবিত্র দায়িত্ব। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বইয়ের লেখক আ ন ম এহসানুল হক মিলন প্রমুখ।