ঢাকা, সোমবার, ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিগগিরই নির্বাচন চায় বায়রা প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে

মোঃ মামুন: গত ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ঢাকা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সী (বায়রা) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বায়রা সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোঃ ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন,  গত ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত বায়রার ইতিহাসে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীজ (বায়রা)-এর কার্যনির্বাহী কমিটির ২০২২-২০২৪ইং সালের নির্বাচনে মোট ২৭টি পদের মধ্যে আমাদের সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদে সর্বমোট ২৩টি পদে বিপুল ভোটে ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিলো । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেমিটেন্স আয়ের এই খাত কখনও বায়রার মাধ্যমে এমন কোন শক্তিশালী নেতৃত্ব পায়নি যারা সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে একটু সুষ্ঠু আন্তঃযোগাযোগ ও গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে এই সেক্টরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করে একটি সুশৃঙ্খল সমন্বিত এবং ব্যবসায়ীও প্রবাসগামী কর্মীবান্ধব বায়রা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে । নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের আশা এবং স্বপ্নভঙ্গের শুরু হয় সিন্ডিকেট বিরোধী স্লোগানে নির্বাচিত হওয়া আমাদের প্যানেলের প্রধান (সভাপতি) আবুল বাশার তাঁর একান্ত অনুসারী ১৫/১৬ জন সমর্থককে নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য পরাজিত প্যানেল প্রধানও মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের মূলহোতা রহুল আমীন স্বপন সহ ৪ জনের সাথে একীভূত হয়ে আমাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সংখ্যালঘুতে রূপান্তর করেন । এ এক অভূতপূর্ব লজ্জাজনক ঘটনা; যার ফলশ্রুতিতে প্রবল ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও এই কমিটিতে আমরা যারা সত্যিকারার্থেই বায়রাকে একটি গতিশীল, সক্ষম সংগঠন হিসেবে দেখতে চাই তারা বায়রা’র সদস্যদের কল্যাণে এবং এই সেক্টরের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারিনি। গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে বায়রা’র বর্তমান কমিটির কার্যকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বা আমাদের কমিটি ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন কমিশন এবং আপিল বোর্ড গঠনে ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতা ঢাকতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ইং পর্যন্ত বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে আনেন। বিগত ২৩.০৬.২০২৪ইং তারিখে ইর্মাজেন্সি মিটিং-এর মাধ্যমে একটি বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন এবং আপিল বোর্ড গঠন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, যে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয় পতিত স্বৈরাচারের দোসর ইউনিয়ন ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতকারীদের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ আত্মসাৎকারী এবং প্যানেল প্রধান আবুল বাসারের বিশ্বস্তও অনুগত যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন মহি’কে। তন্মধ্যে জনাব মাজহারুল ইসলাম মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের জন্য অভিযুক্ত রুহুল আমীন স্বপনের আপন ভাগ্নে। এহেন একটি পক্ষপাতদুষ্টও অনভিজ্ঞ একটি কমিশনের মাধ্যমে অনেক সদস্যদের প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা কোন প্রকার কর্ণপাত না করে একটি প্রহসনের নির্বাচন সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যার মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের দোসরা আবারও বায়রায় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে নিজেদের আখের গোছানো এবং সিন্ডিকেট-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন । সবচেয়ে দুঃখজনক এবং লজ্জার কথা হল, জুলাই বিপ্লবের যে দিনগুলোতে পুরো জাতি উৎকণ্ঠিত, চিন্তিত এবং নতুন দিনের আশায় লড়াইরত, যখন সকল সরকারী-বেসরকারী কার্যক্রম স্থবির, মোবাইল ও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বন্ধ এবং দফায় দফায় কার্ফিউ চলছিল ঠিক সেই সময়টাতেই এই অবৈধ কমিশন এবং আপিল- বোর্ড প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাচাই বাছাই ব্যাতিরেকে তাদের পছন্দমত কিছু আজ্ঞাবহ লোকদের সংযুক্ত করে একটি ভোটার তালিকা তৈরি করে । এফবিসিসিআইয়ের আরবিট্রেশন কমিটির কাছে এই নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ড বাতিলের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এফবিসিসিআইয়ের তৎকালীন নেতৃত্ব পতিত স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হওয়ায় এবং আমাদের প্যানেল প্রধান আবুল বাশার ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক প্রেসিডেন্ট পদের প্রভাব খাটিয়ে এফবিসিআইকে এতদ্বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত রাখেন বরং এফবিসিসিআই থেকে আমাদেরকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয় । পরবর্তীতে আমাদের সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে আমাদের কমিটির মেয়াদ বর্ধিতকরণ কেন অবৈধ হবে না- এই বিষয়ে ২টি রিট আবেদন করা হয় । প্রথম রিট আবেদনটি স্থগিত করার জন্য আমরা বায়রা’র কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আমাদের কমিটির মেয়াদকাল স্থগিতের নির্দেশনাটি স্থগিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে তুমুল সমালোচনা এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় রিটটি স্থগিত করার ব্যাপারে আমরা বিরোধিতা করে সাধারণ সদস্যদের মতামতকে সম্মান জানিয়ে বায়রা’য় প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে একটি অবাধ, সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মতামত দিই ।কিন্তু বর্তমান মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী সৈরাচারী ফ্যাসিবাদের অন্যতম প্রেতাত্মা এবং আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ের উপকমিটির সদস্য, তিনি আওয়ামী যুবলীগের উত্তরের সাবেক সভাপতি ফ্যাসীবাদি পতিত শাসকের পদধারী নেতা বায়রা’র পলাতক প্রেসিডেন্ট আবুল বাশার ও সিন্ডিকিটের অনত্যম হোতা রূহুল আমিন স্বপনের ইঙ্গিতে এবং পারস্পরিক যোগসাজসে আমাদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজ উদ্যোগে হাইকোট কর্তৃক দ্বিতীয় স্থগিত আদেশটিও স্থগিত করার ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সদস্যদের মতামতের প্রতি অসম্মান ও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। এ রকম একটি পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে তারা পুরনো পতিত স্বৈরাচারের দোসর, সিন্ডিকেটের হোতাদেরকে জিতিয়ে এনে বায়রাকে অকার্যকর ও পকেট সংগঠনে পরিণত করার ষড়যন্ত্র আঁটছেন। এরই মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কর্তৃক একটি ইসি কমিটির বৈঠক আহ্বান করা হলে সদস্যদের মধ্যে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব রিয়াজুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বরত) মিটিংটি বাতিল করার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর পলাতক সভাপতি এবং তার পদলেহনকারী অবৈধ মহাসচিব সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে মিটিংটি সম্পন্ন করে পলাতক নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তে তাদের পছন্দমত একজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে পুনরায় নির্বাচন কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন । এরই প্রতিবাদে বায়রার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জনাব রিয়াজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি-১ জনাব নোমান চৌধুরী, বৈধ মহাসচিব জনাব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, যুগ্ম মহাসচিব-১ জনাব ফখরুল ইসলাম এবং কালচারাল সেক্রেটারি রেহানা পারভীন সহ ৯ জন বায়রার সকল পদ এবং ইসি কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। বর্তমান বায়রা’র প্রেসিডেন্ট পলাতক, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ সহ ৯ জন পদত্যাগ করেছেন এবং বেশ কয়েকজন আওয়ামী ফ্যাসীবাদের সদস্যও পলাতক রয়েছেন ফলস্বরূপ বায়রা দৃশত অকার্যকর। এমতাবস্থায় অবশিষ্ট ভঙ্গুর কমিটি বালিত করে প্রশাসকের মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়াটা অনিবার্য হয়ে পড়েছে।