নৌপরিবহন অধিদপ্তরের “ইজিআইএমএনএস” প্রকল্পে লাগামহীন দুর্নীতিসহ ভয়ানক সিন্ডিকেটের বেড়াজালের তোপের মুখে ঠিকাদার মরহুম এস এম মনিরুজ্জামানের আত্মাহুতির লোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রমান পাওয়া গেছে।
নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ইজিআইএমএনএস প্রকল্পের ভুমি উন্নয়ন টেন্ডারের আওতায় কুয়াকাটা ভূমি উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করার জন্য উক্ত টেন্ডারের প্যাকেজ-১ লট-১ ওরিয়েন্ট ট্রেডিং এন্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানকার্যাদেশ পায়।মরহুম এস এম মনিরুজ্জামান ওরিয়েন্ট ট্রেডিং এন্ড বিলডারস লিমিটেডের পক্ষ হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে উক্ত কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব পান। কাজটি সম্পন্ন করার জন্য মনিরুজ্জামান তার ৪টি মাটি কাটার ড্রেজার, কিছু জমি জমা ও তার স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করেন। কাজটি তিনি যথারীতি চলমান রেখেছিলেন কিন্তু প্রকল্পের চারজন অসাধু কর্মকর্তা (জনাব ক্যাপ্টেন আবু হায়াত আশরাফুল আলম, জনাব ক্যাপ্টেন মোঃ মিসবাহ উদ্দিন, জনাব মো: নাজমুল হোসাইন এবং জনাব মো: রিয়াজ উদ্দিন) প্রকল্পের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকাকালীন সময়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা খাটিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশে কাজে বাধা প্রদান করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য টাকা দাবী করতেন এবং কোন উপায় অন্ত না পেয়ে তাদের সকল চাহিদা পূরণ করতে মরহুম এস এম মনিরুজ্জামান বাধ্য হন এবং চরমভাবে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। যাহার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা কাজ অগ্রসর করে বাকী কাজ এগুতে পাড়ছিলেন না। মরহুম এস এম মনিরুজ্জামান উল্লেখিত সিন্ডিকেটের চারজন অসাধু কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ১,৬২,৮০০০০/- উৎকোচ দিতে বাধ্য হন যাহা তার আত্মাহুতির পূর্বে ১৯-১২-২০১৯খ্রি. তারিখেরএকটি হ্যান্ড নোটে উল্লেখ করেছেন। অবশেষে কাজ সম্পন্ন না করিলেও বিল পাবেন মর্মে অসাধু সিন্ডিকেটের সদস্যরা মরহুম এস এম মনিরুজ্জামানকে মানসিকভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভীষণভাবে চাপ সৃষ্টি করে পুনরায় আরও ১,২০,০০,০০০/- টাকা দাবী করেন। তিনি বাধ্য হয়ে তার বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধারকর্য করে অসাধু সিন্ডিকেটের সদস্যদের আরও ৫০,০০,০০০/- টাকা দিতে বাধ্য হন। তারা উক্ত টাকা পাওয়ার পরেও ক্ষান্ত হয়নি এবং মরহুম এস এম মনিরুজ্জামানের সরকারী ফাইল গায়েব করে ফাইল খোঁজার অজুহাতে পুনরায় ৯,০০,০০০/- উৎকোচ আদায় করেন। কিন্তু তার কাগজ পত্রাদি ফেরত না দেওয়াতে তিনি বিগত ০২-০৩-২০২০খ্রি. তারিখে উক্ত কাগজ পত্রাদি সংগ্রহ করার উদ্দেশে সাইড ইনচার্জ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে প্রকল্প পরিচালক বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেন কিন্তু তারা তার কাগজ পত্রাদি ফেরত দেয়নি বরং আরও অবৈধ টাকার জন্য বিভিন্নভাবে পুনরায় মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। সৃষ্ট চাপের ফলে তিনি তার বাসায় স্ত্রী সন্তানদের সামনে প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি করতেন এবং মারাত্মকভাবে অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েন।তার নিকট আর কোন টাকা পয়সা সংগ্রহ করার উপায় ছিল না।যার ফলে তিনি তার সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ করে ঢাকার মোহাম্মাদপুরের ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে তার স্ত্রী সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এমতাবস্তায় তিনি তার স্ত্রী সন্তানদের খরচ দিতেও অপারগ হয়ে পড়েন অপরদিকে অসাধু সিন্ডিকেটটির চাহিদা পুনরায় পূরণ করতে তিনি মানসিক চাপের মুখে ছিলেন, তাছাড়া তাদের অবৈধ অর্থ যোগানে তিনি তার বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধারকর্য করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তার টাকা জোগাড় করার কোন উপায় ছিলনা বিধায় আত্মহত্যা করা ছাড়া তার কোন রাস্তা নাই বলে তিনি তার স্ত্রী সন্তানদের বারংবার বলেছিলেন। এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতি তিনি সামাল দিতে না পেরে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তার ছোট ভাইয়ের ভাসানটেকের বাসায় ২য় তলায় ফ্যান এর সাথে গলায় রশি প্যাচিয়ে ফাঁস দিয়ে ০৫-০৭-২০২০খ্রি. তারিখে সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় আত্মহত্যা করেন যাহা ০৫-০৭-২০২০খ্রি. তারিখের সুরতহাল / ময়না তদন্ত রিপোর্ট ও ০২-০৯-২০২০খ্রি.তারিখে পুলিশের চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্টে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।বিষয়গুলো মরহুমের স্ত্রী মারুফা ইয়াসমিন রোজী ও তার সন্তানরা নিশ্চিত করেছেন।বিষয়গুলো প্রকাশ না করার জন্য মরহুমের স্ত্রী মারুফা ইয়াসমিন রোজীকে অসাধু সিন্ডিকেটটি বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিত। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে শোকার্ত ও মানবেতর জীবন যাপন করাতে সবকিছুকে উপেক্ষা করে কিছু তথ্য প্রমাণসহ ২৯-০৯-২০২২খ্রি. তারিখে মরহুমের স্ত্রী মারুফা ইয়াসমিন রোজী অসাধু সিন্ডিকেটটির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীসহ তার স্বামীর কাছ থেকে নেয়া অবৈধভাবে আত্মসাৎকৃত টাকা অসাধু সিন্ডিকেটটির কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার জন্য বর্তমান প্রকল্প পরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রক্ষিতে ৩১-১০-২০২২খ্রি. তারিখেনৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরিচালক বদরুল হাসান লিটন (উপসচিব) কে আহবায়ক করে ফাওজিয়া রহমান (সহকারী কেমিস্ট, নৌপরিবহন অধিদপ্তর) কে সদস্য এবং ফারাহ তানজিলা মতিন (এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, নৌপরিবহন অধিদপ্তর) কে সদস্য সচিব করে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং উক্ত কমিটিকে ৩০-১১-২০২২খ্রি. তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেন। তবে পরিচালক বদরুল হাসান লিটন (উপসচিব) এবং ফাওজিয়া রহমান (সহকারী কেমিস্ট, নৌপরিবহন অধিদপ্তর) অসাধু সিন্ডিকেটটির কাছ থেকে দশ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে তদন্তের কার্যক্রমকে অন্য দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন যদিও ক্যাপ্টেন কে এম জসীম উদ্দিন সরকার (প্রাক্তন চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার এবং প্রাক্তন প্রকল্প পরিচালক, ইজিআইএমএনএস প্রকল্প, নৌপরিবহন অধিদপ্তর) কুয়াকাটা প্রকল্প এলাকার ভূমি উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার মরহুম এস এম মনিরুজ্জামান এর কাছ থেকে উল্লেখিত চার জন ইজিআইএমএনএস প্রকল্পের কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন খাতের নাম করে অবৈধভাবে টাকা নিয়েছেন বলে মরহুম এস এম মনিরুজ্জামান তার জীবদ্দশায় টাকাগুলো উদ্ধারের জন্য তার নিকট সহায়তা চেয়েছিলেন বলে তিনি তার ২১-১১-২০২২ খ্রি.তারিখের জবানবন্দিতে লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া তদন্তের শুনানিতে মরহুমের স্ত্রী মারুফা ইয়াসমিন রোজী ও তার সন্তানদের সাথে পরিচালক বদরুল হাসান লিটন (উপসচিব) এবং ফাওজিয়া রহমান (সহকারী কেমিস্ট) নানা ধরনের আপত্তিকর আচরণ করেছেন যাহা তদন্তের বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যহীন। এ বিষয়ে মরহুমের স্ত্রী মারুফা ইয়াসমিন রোজী দ্রুতদেশের প্রচলিত আইনের সহায়তা নিবেন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও নালিশ করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন যাহাতে দোষীরা এবং তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় তার জন্য তিনি আদালত মামলা দায়ের করেন যাহা পিবিআই তদন্তাধিন রয়েছে। বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও উৎকোচের বিনিময়ে তদন্ত কার্যক্রমকে কেন অন্য দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তদন্ত রিপোর্ট কেন গত ১৩ মাস যাবত চূড়ান্ত করতে পারেনি এবং তার পিছনে কোন অদৃশ্য শক্তি জড়িত আছে এ বিষয়েও মরহুমের স্ত্রী মারুফা ইয়াসমিন রোজী সংশ্লিষ্ট সংস্থায় নালিশ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এসকল ঘটনার প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের ক্যাপ্টেন আবু হায়াত আশরাফুল আলম উপ-প্রকল্প পরিচালক হতে অব্যাহতি প্রদান করেছে। অপরদিকে ক্যাপ্টেন মোঃ মিসবাহ উদ্দিন পলাতক রয়েছে এবং অন্য দুই কর্মকর্তাকে প্রাক্তন মহাপরিচালক (কমডোর নিজামুল হক) তাদের চাকুরি হতে বরখাস্থ করেছিলেন, সেই বরখাস্থ থাকা সত্তেও পিবিআই মামলা তদন্তাধিন অবস্থায় তারা দুজন ২২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা উৎকোচের বিনিময়ে অধিদপ্তরের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজিনা বেগমও সহকারি পরিচালক মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সরকারম্যানেজ করে সকল দুর্নীতি অনিয়ম আড়াল করেবৈআইনি ভাবে তাদের চাকুরি পুন: বহালের আদেশ জারি করেন যাহা এক বিশ্বয়ের সৃষ্টি করেছেন।
বাংলাদেশের স্থপতি স্বাধীনতার মহান কারিগর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া স্বপ্নের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গর্বিত অংশীদারে বাঁধাগ্রস্থ না করতে, উল্লেখিত দুর্নীতিবাজ ও তাদের সহযোগীদের আশু উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সকলসংশ্লিষ্ট সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল।