
ভারতের লখিমপুর খেরিতে বিজেপি সরকারের এক মন্ত্রীর পুত্রের গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে নিহত কৃষকদের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পেয়েছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ও তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কিন্তু সেখানে গিয়ে আগেই দেখা করে এসেছে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু এ সাক্ষাৎ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে যেখানে এ মিত্র দুই দলের সংঘাত বাধার কথা, সেখানে নিজেদের মধ্যেই তারা দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে।
আসল ঘটনা সম্পর্কে জেনে আসা যাক। লখিমপুর যাওয়ার আগে রাহুল প্রশ্ন তোলেন, তৃণমূলসহ কয়েকটি দলকে লখিমপুর যেতে দেয়া হয়েছে। তাহলে কংগ্রেসকে কেন যেতে দেয়া হবে না? কংগ্রেস নেতা রাহুল জানান, টিএমসি (তৃণমূল) ও ভীম আর্মিকে লখিমপুর যেতে দেয়া হয়েছে।
এর আগের দিন মঙ্গলবার তৃণমূল সংসদ সদস্যরা লখিমপুর গিয়ে মৃত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তারাই প্রথম দল যারা কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় রাহুলের মন্তব্যকে ঘিরে। এতে প্রকাশেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন তৃণমূল নেতারা। কার্যত কংগ্রস নেতা রাহুলকে গুণতে নারাজ তারা।
রাহুলের সমালোচনা করে তৃণমূলে মুখপাত্র ও সাবেক সংসদ সদস্য কুণাল ঘোষ টুইট করেন, ‘রাহুল গান্ধীর এটা জানা উচিত যে ত্রিপুরায় বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তৃণমূল লখিমপুর গেছে।’ তার বক্তব্য, ‘বিজেপিকে রুখতে ব্যর্থ কোনো পার্ট টাইম রাজনীতিবিদের কাছ থেকে অরাজনৈতিক মন্তব্য শুনতে তৃণমূল প্রস্তুত নয়।’
লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেন, তৃণমূল ও আপকে পেছন থেকে বিজেপি সাহায্য করছে কংগ্রেসকে রুখে দেয়ার জন্য। তার দাবি, ‘রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে আগে লখিমপুর যেতে দেয়া হলো না। কিন্তু তৃণমূল প্রতিনিধিদের কৃষকদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হলো। এ এক অদ্ভুত বৈষম্যমূলক আচরণ চলছে।’ অর্থাৎ, অধীর তৃণমূল-বিজেপি আঁতাতের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অন্যদিকে দলের মুখপত্র জাগোবাংলার পুজোসংখ্যা প্রকাশ অনুষ্ঠানে বুধবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘তৃণমূলই একমাত্র দল, যারা লখিমপুরে মৃত কৃষকদের পরিবারের কাছে পৌঁছেছে। ১২ ঘণ্টা ধরে এপথ-ওপথ দিয়ে গিয়ে কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মন্ডল, দোলা সেন, আবীর বিশ্বাসরা পৌঁছাতে পেরেছিলেন। দোলা তো পাঞ্জাবি সেজেছিলেন। ওরা পৌঁছাতে পেরেছে, এটাই বড় ব্যাপার।’
লখিমপুর খেরিতে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা: কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রথমে সীতাপুরে যান। সেখান থেকে বোন প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে লখিমপুর পৌঁছান। মৃত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। রাহুলের দাবি, অবিলম্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
রাহুল বলেন, ‘মৃতের পরিবার পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তারা চায়, এখনই মন্ত্রীর ছেলেকে গ্রেপ্তার করুক পুলিশ। দোষীর শাস্তি হোক।’ রাহুলের অভিযোগ, ‘অজয় মিশ্র কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আমরা এখানে এসেছি সরকারকে চাপ দিতে, যাতে তারা মন্ত্রীর ছেলেকে গ্রেপ্তার করে।’
এর আগে সোমবার থেকে প্রিয়াঙ্কাকে সীতাপুরে আটক করে রাখা হয়েছিল। তাকেও বুধবার মুক্তি দেয়া হয়। তিনি জানিয়েছেন, ‘মৃতের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ চায় না। তারা ন্যায় চায়। দোষীকে তাই অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।’