ঢাকা, রবিবার, ১৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিন হাজারে দেয়া হয় ২১৯০ টাকা

অ্যাপসভিত্তিক ডিজিটাল মাইক্রোফাইন্যান্সের নামে অবৈধ সুদের ব্যবসা পরিচালনা করে একটি প্রতারক চক্র। চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

পুলিশ বলছে, এরা অর্থ সংকটে থাকা স্বল্প আয়ের লোকজন এবং বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করে। প্রতারকরা মাত্রাতিরিক্ত প্রসেসিং ফি নিয়ে এবং উচ্চ হারে সুদ নির্ধারণ করে স্বল্প সময়ের জন্য ৩ থেকে ৭ দিনের জন্য ঋণ প্রদান করে। গ্রাহক তিন হাজার টাকার জন্য আবেদন করলে অনুমোদনের পর প্রসেসিং ফি বাবদ ৮১০ টাকা রেখে গ্রাহককে মাত্র ২ হাজার ১৯০ টাকা দেয়া হতো। ৭ দিন শেষে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয় মোট ৩ হাজার ১৮ টাকা।

গ্রেপ্তাররা হলেন, ইমানুয়্যাল এডওয়ার্ড গোমেজ, আরিফুজ্জামান, শাহিনূর আলম ওরফে রাজীব, শুভ গোমেজ ও মো. আকরাম। রাজধানীর ধানমন্ডি, বনানী এবং মিরপুর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার কনা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি অ্যাশ রংয়ের এলিয়ন গাড়ি, ৯ টি মোবাইল ফোন, ৯ টি সিম কার্ড, ৪ টি ল্যাপটপ ও ৪ টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা সরকারি অনুমোদন ব্যতীত থান্ডার লাইট টেকনোলজি লিমিটেড, নিউ ভিশন ফিনটেক লিমিটেড ও বেসিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। কোন আইনগত অনুমোদন ছাড়াই তারা গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ করছে। গ্রেপ্তাররা অনলাইন অ্যাপস যেমন-টাকাওয়ালা (পার্সোনাল লোনস অনলাইন), র্যাপিডক্যাশ, আমার ক্যাশ, ক্যাশ ক্যাশসহ আরও অনেক অ্যাপ এর মাধ্যমে জামানতবিহীন লোন দেয়ার নামে চলে মাত্রাতিরিক্ত সুদের কারবার। এসকল অ্যাপসগুলোর সার্ভার চায়নাতে অবস্থিত এবং যেগুলো মূলত চায়না থেকে পরিচালিত হয়।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রাহকরা এসব অ্যাপস ইন্সটল করার মাধ্যমে অ্যাপসে গ্রাহকের অজান্তে ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট পড়া, গ্রাহকের অনুমতি ছাড়াই দূর নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণ, মোবাইলের কন্টাক্টস পড়াসহ মোবাইলের এক্সাক্ট লাইভ লোকেশন নির্ণয়, ফোনের স্ট্যাটাস এবং তথ্য সংগ্রহ, ফোনে সংরক্ষিত মেসেজ পড়া, পরিবর্তন করার অনুমতি নিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের পারসোনাল ডাটা সিকিউরিটির চরম হুমকিতে পরে।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, কিছু চাইনিজ নাগরিক বাংলাদেশি নাগরিকের সহায়তায় অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে জামানতবিহীন স্বল্প সুদে লোন প্রদান করার নামে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহক আকৃষ্ট করে। তাদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহকরা লোন গ্রহণ করার পর স্বল্প সুদের পরিবর্তে উচ্চহারে সুদ প্রদানের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার প্রতারকরা অ্যাপসগুলো ফেইসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। তারা মূলত অর্থ সংকটে থাকা স্বল্প আয়ের লোকজন এবং বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করে। টার্গেট গ্রাহকরা বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত লিংকে ক্লিক করে কিংবা গুগল স্টোর হতে এসব অ্যাপসগুলো ডাউনলোড করে, এরপর অ্যাপসগুলোর চাহিদা মতো তথ্য দেয়ার পর পারমিশন দিলে অ্যাপসটি গ্রাহকের মোবাইলে ইন্সটল হয়ে যায়। এরপর গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নাম্বার, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ফোন নাম্বার ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে একাউন্ট খোলা হয়। চাহিদা অনুযায়ী আবেদনের প্রেক্ষিতে মাত্রাতিরিক্ত প্রসেসিং ফি নিয়ে এবং উচ্চ হারে সুদ নির্ধারন করে স্বল্প সময়ের জন্য ৩ থেকে ৭ দিনের জন্য ঋণ প্রদান করে।

ডিবি প্রধান বলেন, গ্রাহক তিন হাজার টাকার জন্য আবেদন করলে অনুমোদনের পর প্রসেসিং ফি বাবদ ৮১০ টাকা রেখে গ্রাহককে মাত্র ২ হাজার ১৯০ টাকা প্রদান করা হয়। ৭ দিন শেষে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয় মোট ৩ হাজার ১৮ টাকা। মেয়াদ শেষে অনাদায়ে প্রতিদিন হিসাবে গ্রাহককে উচ্চহারে সুদ প্রদান করতে হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়াও অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস ফি ১৮০ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ৫ টাকা কেটে রাখার যুক্তি দেখায়। পরিমাণ যতো বেশি হবে টাকা কেটে রাখার প্রবণতাও বেশি। এ ঋণের টাকা গ্রাহককে বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। প্রতারকদের এ লোভনীয় অফারের ফাঁদে পরে অনেকে সর্বস্ব হারায়।

মূলহোতাদের গ্রেপ্তারে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আর চীনের নাগরিক যারা আমাদের দেশে আছে তাদের আমরা ধরার চেষ্টা করবো। আর এর সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাদেরও আমরা গ্রেপ্তার করবো।

যে কোন অ্যাপস ইন্সটল করার পর অথবা কোন লিংকে প্রবেশ করার পর ব্যাক্তিগত কোন তথ্যাদি প্রদান করার পূর্বে নিরাপত্তার বিষয়টি ভালোভাবে নিশ্চিত