ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড গ্রামীণ ব্যাংক অর্ডিনেন্স 2013 অনুসারে অবসরকারিদের পুন:পেনশন সহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য ভাতাদি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য:

উপরোক্ত বিষয়টিকে পরিস্কার করতে রাষ্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করতে হয়। যা ম্নিরূপ:

প্রজাতন্ত্রের সর্ব্বোচ্চ তিনটি মূল অরগান রয়েছে: (১) আইনসভা, (২) বিচার বিভাগ এবং (৩) কার্যনির্বাহী।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আইন অনুসারে সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে, রাজ্যের অন্যান্য সমস্ত ব্যক্তির চেয়ে প্রাধান্য গ্রহণ করেন এবং ক্ষমতা প্রয়োগ করেন এবং সংবিধান এবং অন্য কোনও আইন দ্বারা তাঁর উপর অর্পিত ও আরোপিত দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন।

খুবই সাধারনভাবে বলা যায়- রাষ্ট্রের উক্ত তিনটি অঙ্গই অঙ্গাঙ্গিভাবে জাড়িত। তবে আইন সভা ও কার্যনির্বাহী – এই দুটি অঙ্গ যখন কোন আইন অনুমোদন করে –সেই আইনের অনুকুলে সকল বিষয় বাস্তবায়িত হয়। সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কোন বিশ্লেষনের বা রায়ের প্রয়োজন হয় না। তবে যদি কেহ উক্ত ‍দুই অঙ্গের অনুমোদিত আইনকে বিধি সম্মত মনে না করে, সেক্ষেত্রে সে বিচার বিভাগরে আশ্রয় নিতে পারে।

যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংক রাষ্ট্রের উক্ত দুইটি প্রধান অঙ্গের অনুমোদিত আইনকে অমান্য করে পুন:পেনশন বাস্তবায়ন করছে না- সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক উক্ত দুটি অঙ্গের অনুমোদিত আইনের বিরোধিতা করেছে। সেক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক প্রয়োজন মনে করলে – পুন:পেনশন বাস্তবায়নের বিষয়ে বিচার বিভাগরে দ্বারস্থ হতে পারে- গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরকারিগন নয়।

গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরকারিগন বর্নিত দুই অঙ্গের অনুমোদিত অর্ডিনেন্স (অর্ডিনেন্স 2013) অনুসারে পুন:পেনশন বাস্তবায়ন চাচ্ছে। যেখানে অবসরকারিদের বিচার বিভাগের স্বরনাপন্ন হওয়ার কোনই প্রয়োজন নেই।

অবসরকারিদের পুন:পেনশন সহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য ভাতা কার্যকর জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের বিধি তৈরীর ক্ষমতা:  

গ্রামীণ ব্যাংকের অর্ডিনেন্সে (2013) বর্নিত বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বর্নিত ধারা অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংক বোর্ড অবসরকারিদের জন্য পুন:পেনশন সহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য সুবিধা বাস্তাবয়ন করতে পারে।উল্লেখ্য গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের জন্য সকল বেতন-ভাতাদি সরকারি নিয়ম অনুসরন করে বোর্ড অনুমোদন করে আসছে। সেক্ষত্রে অর্ডিনেন্সেরর এতদ সংক্রান্ত ‍অনুচ্ছেদগুলির ব্যাখ্যা করা হলো:

গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩, ( ২০১৩ সনের ৫৬ নং আইন )

আইনের প্রাধান্য অন্যান্য আইনের প্রযোজ্যতা:

৩।(১) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।

অর্ডিনেন্সের উপরোক্ত অনুচ্ছেদ মোতাবেক অবসরকারিদের পুন:পেনশন সহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য সুবিধা  বাস্তবায়নে কোন বাধা নাই। গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের জন্য সময়ে সময়ে প্রচলিত সরকারি সকল সুবিধা প্রদানের ন্যায় পুন:পেনশন সহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য সুবিধা বোর্ড বাস্তবায়ন করতে পারে।

(২) সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৪নং আইন) এবং ব্যাংক কোম্পানী সংক্রান্ত আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের সুনির্দিষ্ট বিধানসমূহ এই ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করিতে পারিবে।

উপরোক্ত অনুচ্ছেদ অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংকে পুন:পেনশন বাস্তবায়নে কোন বাধা নাই।

নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধান

৮। (১) ব্যাংকের কার্যক্রম ও বিষয়াবলীর পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধান পরিচালনা বোর্ডের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং ব্যাংক উক্ত বোর্ডের মাধ্যমে উহা প্রয়োগ ও তত্ত্বাবধান সম্পাদন করিতে পারিবে।

পরিচালনা পরিষদ পুন:পেনশন সহ অন্যান্য ভাতাদি বাস্তবায়ন করতে পারে।

(২) ব্যাংক উহার কার্যাদি সম্পাদনে জনস্বার্থের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত সামাজিক সুরক্ষার অধীনে পুন:পেনশন জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। সেক্ষেত্রে পুন:পেনশন বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত বোর্ড দিতে পারে।

 কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ

২৭। ব্যাংক, উহার দায়িত্ব ও কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য যেইরূপ প্রয়োজনীয় মনে করিবে সেইরূপ সংখ্যক ব্যক্তিগণকে কর্মকর্তা ও কর্মচারী হিসাবে, প্রবিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্তে নিয়োগ করিতে পারিবে।

গ্রামীণ ব্যাংক 3/86 সার্কুলার দ্বারা কর্মী নিয়োগ সহ পেনশন গ্রাচ্যুইটির প্রবিধি নির্দিষ্ট করেছে। সেখানে পরিস্করা বলা আছে- গ্রামীণ ব্যাংকের স্কেল প্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য সরকারি নীতি অনুযায়ী ”পেনশন এন্ড ডেথ-কাম-রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট স্কীম: চালু করা হলো। উক্ত সার্কুলারের 5.0 অনুচ্ছেদে বলা আছে- পেনশনের জন্য সরকারী নিয়ম-কানুন গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ ব্যাপারে সরকারের বিস্তারিত বিধিমালা আছে।

আলোচ্য বিষয়গুলি গ্রামীণ ব্যাংককে পুন:পেনশন বাস্তবায়নে বাধ্য করে।

 প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা

৩৫। বোর্ড, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই আইনের বিধানাবলী কার্যকর ও ব্যাংকের বিষয়াবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে যে সকল বিষয়ে বিধান করা প্রয়োজন বা সমীচীন সেই সকল বিষয়ে, এই আইনের বিধানাবলী ও বিধিমালার সহিত অসংগতিপূর্ণ নহে এইরূপ প্রবিধান প্রণয়ন করিতে পারিবে।

বোর্ড উপরোক্ত অনুচ্ছেদ মোতাবেক গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মীদের জন্য সরকারের পে-স্কেল অনুসারে বেতন ভাতাদি ও পেনশন প্রদান করে আসছে। একইভাবে বোর্ড পুন:পেনশন সহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য সুবিধা   বাস্তবায়নে বাধ্য ।

অসুবিধা দূরীকরণ

৩৬। এই আইনের কোন বিধান কার্যকর করিবার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা দেখা দিলে সরকার উক্ত অসুবিধা দূরীকরণার্থ, লিখিত আদেশ দ্বারা, প্রয়োজনীয় যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।

পুন:পেনশন বাস্তবায়নে কোন আইনগত বাধা নেই। সেক্ষেত্রে সরকারের কোন আদেশেরও প্রয়োজন নেই।

এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব, মোর্শেদা জামান গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে পুন:পেনশন বাস্তবায়নের পক্ষে পত্র প্রেরন করেছে। পত্রে পরিস্কার ভাষায় বলে দিলেন “গ্রামীণ ব্যাংক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বর্নিত আবেদনের (পুন:পেনশন) বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংক এর পরিচালনা পর্যদ কর্তৃক বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হ’ল।”

গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া দেশের সকল সাংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুন:পেনশন ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে।

সর্বপুরি উপরোক্ত বিশ্লেষনের আলোকে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ডই পুন:পেনশন বাস্তবায়নে করতে পারে।

‍প্রসংগত পর্যালোচনার বিষয়ে যা এসে যায়। প্রজান্ত্রের কোন পাবলিক সার্ভেন্ট উপরোক্ত অর্ডিনেন্সের যে কোন অনুচ্ছেদের প্রতিকুলে কোন প্রত্র ইস্যুর করার অধিকার রাখে না। যদি কোন পাবলিক সার্ভেন্ট ইতিমধ্যে উক্ত অর্ডিনেন্সের যে কোন অনুচ্ছেদের প্রতিকুলে কোন পত্র হস্যু করে থাকে – তবে তাকে সে পত্র প্রত্যাহার করার পরামর্শ প্রদান করা হলো। কারন এক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা গৃহিত হবে। তবে উক্ত অর্ডিনেন্সের যে কোন অনুচ্ছেদের অনুকুলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আদিষ্ট হয়ে প্রজাতন্ত্রের পাবলিক সার্ভেন্ট পত্র ইস্যু করতে কোন বাধা নে্ই। সেক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মোর্শেদা জামানের উপরে বর্নিত পত্রটি উদাহরন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।